শুরু হোক গণিত অলিম্পিয়াডের প্রস্তুতি

বছর ঘুরে আবার শুরু হতে যাচ্ছে জাতীয় গণিত অলিমিপয়াড ২০১৩। আজ গণিত অলিম্পিয়াডের প্রস্তুতি হিসেবে বিভিন্ন সমস্যা এবং সেগুলো সমাধানের কৌশল নিয়ে আলোচনা করা হলো।

সমস্যা সমাধানের যত কৌশল
গণিত অলিম্পিয়াডের সমস্যা আর আমাদের বইয়ের অনুশীলনীর মধ্যে মূল পার্থক্য হলো, বইয়ের অনুশীলনী সমাধানের উপায়গুলো আমাদের আগে থেকেই জানা থাকে।
আর সমস্যা সমাধানের জন্য আমাদের সেই উপায়টা প্রয়োগ করতে হয়। তবে জাতীয় গণিত অলিম্পিয়াডের অধিকাংশ সমস্যাই একাধিক ধাপের। তাই সমস্যা সমাধানের শুরুতেই আমাদের কিছু পরিকল্পনা নিয়ে এগোতে হবে। একেকজনের ক্ষেত্রে সমস্যা সমাধানের ধাপগুলো একেক রকমের হতে পারে। তবে সাধারণভাবে সমস্যা সমাধানের জন্য চারটা ধাপ অনুসরণ করা যেতে পারে:
১. সমস্যাটি ঠিকমতো বুঝতে পারা: আমাদের প্রথমেই সমস্যাটি ভালো করে বুঝতে হবে। কারণ, সমস্যাটির মধ্যেই সমাধানের জন্য প্রয়োজনীয় সব তথ্য আছে। তাই সমস্যাটি বারবার পড়তে হবে এবং সমস্যাটির সব অংশ সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা নিতে হবে।
২. সমস্যাটি নিয়ে কাজ করা: সমস্যা পাওয়ার পর প্রথমেই যে জিনিসটি দেখতে হবে, তা হলো কোন পদ্ধতি বা সূত্র ব্যবহার করলে সমস্যাটি সমাধান করা যাবে বা কীভাবে এগোলে সমস্যাটি সমাধান হতে পারে, তা বের করা। তাই সমস্যার তথ্যগুলো বিভিন্ন মান ব্যবহার করে দেখা যেতে পারে। অনেক সময়, বিশেষত জ্যামিতির ক্ষেত্রে ভালো করে একটি চিত্র আঁকলে সমস্যা সমাধান করা সহজ হয়। তবে বলে রাখা ভালো, শুরুতে সহজে নাও বোঝা যেতে পারে কীভাবে কাজ করলে সমাধান হবে। তাই তোমার জানা সব কৌশল ব্যবহার করে দেখতে হবে কোন কৌশল কাজে লাগে।
৩. সঠিকভাবে পরিকল্পনা করা: সমস্যাটি সমাধানের উপায় বের করে সমাধানের জন্য সঠিকভাবে পরিকল্পনা করতে হবে এবং এভাবে ধাপে ধাপে সমস্যাটি সমাধান করতে হবে।
৪. সমাধান সঠিকভাবে লেখা এবং পরীক্ষা করা: সমস্যার সমাধান সঠিকভাবে লিখতে পারাও সমস্যা সমাধানের বড় অংশ। তাই সমাধানের পর সঠিকভাবে সমাধানটি উপস্থাপন করতে হবে এবং প্রাপ্ত ফলাফলটি সঠিক কি না পরীক্ষা করে দেখতে হবে।
গণিত অলিমিপয়াডের প্রস্তুতির জন্য নিয়মিত অনুশীলন এবং লেখাপড়ার বিকল্প নেই। প্রস্তুতির সবচেয়ে ভালো উপায় হলো বিগত বছরের সমস্যাগুলো সমাধানের চেষ্টা করা। তা হলে সমস্যার ধরন সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা পাওয়া যাবে, যদিও বোর্ড পরীক্ষার মতো কমন পড়ার কোনো সম্ভাবনা নেই!
এবার বিভিন্ন ক্যাটাগরির প্রশ্ন সম্পর্কে কিছু আলোচনা এবং কিছু সমস্যার সমাধান। সঙ্গে সঙ্গে প্রস্তুতির জন্য সহায়ক বইয়ের

প্রথম গণিত ক্লাব সমাবেশ

বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে প্রতিষ্ঠিত এবং প্রস্তাবিত গণিত ক্লাবগুলো নিয়ে প্রথমবারের মতো গত ২৮ সেপ্টেম্বর ঢাকার পলাশীতে ফ্রেপড মিলনায়তনে হয়ে গেল প্রথম গণিত ক্লাব সমাবেশ। শুধু প্রতিষ্ঠিত ক্লাবগুলোই নয়, বিভিন্ন এলাকা থেকে ক্লাব প্রতিষ্ঠা করতে আগ্রহী অনেকে যোগ দেন এই সমাবেশে। গণিত ক্লাব কেন দরকার, কীভাবে একটি ক্লাব এলাকায় শিক্ষার্থীদের মধ্যে গণিত বিষয়ে সচেতনতা জন্ম দিতে পারে—এ রকম নানা বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়। সকাল ১০টা থেকে শুরু হওয়া প্রথম পর্বে পরিচিতিমূলক বক্তব্য দেন বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াডের একাডেমিক কাউন্সিলর মাহমুদুল হাসান। গণিত ক্লাবের পথচলা কীভাবে শুরু হতে পারে, কীভাবে ধারাবাহিকতা বজায় রাখা যায়, সেটা নিয়ে আলোচনা করেন একাডেমিক দলের সদস্য তানভীর আরাফাত।
অলিম্পিয়াডকে লক্ষ্য করে ক্লাবের কার্যক্রম কীভাবে চালানো যেতে পারে, সেটা নিয়ে আলোচনা করেন একাডেমিক দলের অপর সদস্য ফরহাদ মহসিন। এ সময় রামানুজন গণিত সংঘের উদ্যোগে প্রস্তুত করা একটি পাঠ্যসূচি মডেল হিসেবে তুলে ধরা হয়। কার্যক্রমের পরবর্তী অংশে অলিম্পিয়াড-ভিত্তিক কার্যক্রমের বাইরেও একটি ক্লাব অন্য কী কী কাজ করতে পারে, সেটি নিয়ে আলোচনা করেন একাডেমিক সমন্বয়ক অভীক রায়। একাডেমিক কাউন্সিলর সৌমিত্র চক্রবর্তী ময়মনসিংহ প্যারালাল ম্যাথ স্কুল পরিচালনায় নিজের অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরেন। সমাবেশে অংশ নেওয়া নওগাঁর সাইকাস ম্যাথ সার্কেলের তানভীর গালিব বলেন, ‘এ ধরনের আয়োজন আমাদের ক্লাবগুলোর নিয়মিত কার্যক্রম পরিচালনায় সহায়ক হবে।
এ রকম সমাবেশের আয়োজন নিয়মিত করা উচিত।’ তিনি জানান, সম্ভব হলে ঢাকার বাইরে আঞ্চলিকভাবে এ ধরনের আয়োজন করা উচিত। সারা দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ৪০টি গণিত ক্লাবের ৮২ জন সদস্য সমাবেশে অংশ নেন। গণিত অলিম্পিয়াড কমিটির সাধারণ সম্পাদক মুনির হাসানের পরিচালনায় অনুষ্ঠিত প্রশ্নোত্তর পর্বের মাধ্যমে শেষ হয় সমাবেশ। ক্লাব সমাবেশের ব্যবস্থাপনায় ছিলেন গণিত অলিম্পিয়াডের সমন্বয়ক বায়েজিদ ভূঁইয়া ও মুভার্স কেন্দ্রীয় সার্কেলের সদস্য আইয়ুব সরকার, কামরুজ্জামান, তুষার চক্রবর্তী, মোহাইমিন, তাহনিন জাহান, সকাল রায়, সুদীপ্ত দেবনাথ, দিপু সরকার, পবিত্র কুমার, রকিবুল ইসলাম, জয়দীপ সরকার, রাকিব, সাদিক প্রমুখ। অনুষ্ঠানটি আয়োজন করে বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড কমিটি এবং পৃষ্ঠপোষকতায় ছিল রকমারি ডট কম।
অভীক রায়

গণিত ক্লাব সমাবেশ

বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে গণিতে উর‌্যাসাহীর সংখ্যা প্রতিদিনই বেড়ে চলছে। তাদের অনেকেই বিভিন্নভাবে নিজেরা গণিতের চর্চা করে বা করার চেষ্টা করে। তবে বেশির ভাগ জায়গায়ই এই চর্চাটা হচ্ছে অনেকটা ব্যক্তিগতভাবে, ঠিক সংঘবদ্ধভাবে নয়। অনেকেরই ধারণা নেই কীভাবে গণিতের চর্চা শুরু করতে হবে? কী কী বই পড়তে হবে, তা কোথায় পাওয়া যাবে ইত্যাদি। এসব কাজ করা অনেকটাই সুবিধা হয় যদি একটা ক্লাব থাকে। একই এলাকার গণিত উর‌্যাসাহীরা একসঙ্গে বসে একসঙ্গে গণিতচর্চা করতে পারে। এখন প্রশ্নটা আসে যে গণিত ক্লাব শুরু করা যায় কীভাবে? ক্লাস আয়োজন করব কীভাবে? কী পড়াতে হবে?

তো এসব প্রশ্ন যাঁরা করছেন, যাঁরা বিভিন্ন স্থানে গণিত ক্লাব খুলেছেন বা খুলতে চান তাঁদের নিয়েই বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড কমিটি আয়োজন করেছে গণিত ক্লাব সমাবেশ।

স্থান: ফ্রেপড মিলনায়তন, পলাশীর মোড়, ঢাকা।

তারিখ: ২৮ সেপ্টেম্বর, শুক্রবার।

সময়: সকাল ১০টা থেকে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত।

সমাবেশে অংশ নিতে কোনো রেজিস্ট্রেশন ফি লাগবে না। আগ্রহীদের নিচের তথ্যগুলোসহ ই-মেইল করতে হবে এই ঠিকানায় : This email address is being protected from spambots. You need JavaScript enabled to view it. নাম (যিনি আসবেন), এলাকা বা প্রতিষ্ঠানের নাম (স্কুল/কলেজ), ক্লাবের নাম (যদি থাকে), ক্লাবের কার্যক্রম সংক্ষেপে, যোগাযোগের ঠিকানা ও মোবাইল ফোন নম্বর।

প্রয়োজনে: অভীক রায় (০১৯১২২৪৪৯৩০)

পাঁচ খুদে গণিতবিদের আরেকটি উৎসবের দিন

math olympiad team receptionফুলেল শুভেচ্ছায় সংবর্ধিত হলো পাঁচ খুদে গণিতবিদ। লাল-সবুজের বাংলাদেশের জন্য প্রথমবারের মতো আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াড থেকে তারা ছিনিয়ে এনেছে রৌপ্য পদক। সঙ্গে আরও আছে ব্রোঞ্জ আর সম্মানজনক স্বীকৃতি। এ সাফল্যের খবর আরও আনন্দঘন করে তুলতেই গণিত দলের সদস্যদের সম্মান জানাতে আয়োজন করা হয় সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের।
ঢাকার কারওয়ান বাজারে ইনস্টিটিউট অব চার্টার্ড অ্যাকাউন্টস অব বাংলাদেশ (আইসিএবি) মিলনায়তনে গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড কমিটি এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। এই অনুষ্ঠান ঘিরে গোটা মিলনায়তন পরিণত হয় খুদে গণিতবিদ, তাদের শিক্ষক, অভিভাবক ও গণিত উৎসবের স্বেচ্ছাসেবকদের মিলনমেলায়। শুধু শুভেচ্ছা আর বক্তৃতা নয়, গণিত অলিম্পিয়াডে অংশগ্রহণের সেই সব দিনের মজার গল্প, স্মৃতিচারণা আর গানে গোটা মিলনায়তন মেতে ওঠে উৎসবে।
জাতীয় সংগীতের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠান সূচনার পর আয়োজক বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড কমিটির সভাপতি জামিলুর রেজা চৌধুরী বক্তব্য দেন। এর পরই শুরু হয় গণিতে সফলদের শুভেচ্ছা জানানোর পালা। একে একে মঞ্চে আসে গণিতের পাঁচ বীর। দর্শক সারি থেকে উঠে এসে ওদের পাশে দাঁড়ান অতিথিরা। যোগ দেন বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড দলের কোচ মাহবুব মজুমদারও। ফুলের তোড়া দিয়ে গণিতবিদদের শুভেচ্ছা জানান অতিথিরা। এ সময় মুহুর্মুহু করতালিতে মুখর হয়ে ওঠে গোটা মিলনায়তন। গণিতবিদদের শুভেচ্ছা জানানোর ফাঁকে ফাঁকে চলে শুভেচ্ছা বক্তৃতা।
জুলাইয়ে আর্জেন্টিনার মার ডেল প্লাটা শহরে অনুষ্ঠিত হয় ৫৩তম আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াড। এতে বাংলাদেশ দলের সদস্য চট্টগ্রাম কলেজের ধনঞ্জয় বিশ্বাস দেশের পক্ষে প্রথমবারের মতো রৌপ্যপদক অর্জন করে। দলের সদস্য ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী সৌরভ দাস ও নূর মোহাম্মদ শফিউল্লাহ ব্রোঞ্জপদক এবং নটর ডেম কলেজের মির্জা মো. তানজিম শরীফ ও ময়মনসিংহ জিলা স্কুলের আদিব হাসান সম্মানজনক স্বীকৃতি অর্জন করে। গণিত অলিম্পিয়াডে বাংলাদেশ দলকে আর্থিক সহায়তা দেয় ডাচ্-বাংলা ব্যাংক। আর সার্বিক সহায়তায় ছিল প্রথম আলো।
অনুষ্ঠানের শুরু ও শেষে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে খুদে গণিতবিদদের ফুলেল শুভেচ্ছা জানানো হয়। ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের পক্ষে এক্সিকিউটিভ কমিটির চেয়ারম্যান সায়েম আহমেদ ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক কে এস তাবরেজ, প্রথম আলোর পক্ষে সম্পাদক মতিউর রহমান ও সহযোগী সম্পাদক আব্দুল কাইয়ুম, বাংলাদেশ ফ্রিডম ফাউন্ডেশনের পক্ষে নির্বাহী পরিচালক সাজ্জাদুর রহমান, রকমারি ডটকমের পক্ষে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মাহমুদুল হাসান, চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুলের পক্ষে মোহিত কামাল, ইয়ুথ এন্ডিং হাঙ্গার প্রজেক্টের পক্ষে বদিউল আলম মজুমদার, মুক্ত আসরের পক্ষে আবু সাঈদ, বাংলাদেশ ওপেন সোর্স নেটওয়ার্কের (বিডিওএসএন) পক্ষে হুমায়ূন কবির, বাংলাদেশ বিজ্ঞান জনপ্রিয়করণ সমিতির পক্ষে আরাফাত, প্রথম আলো বন্ধুসভার পক্ষে সাধারণ সম্পাদক সাইদুজ্জামান রওশন ফুলের তোড়া দিয়ে খুদে গণিতবিদদের শুভেচ্ছা জানান।
ভীতি দূর করে গণিত এক উৎসবে পরিণত হয়েছে উল্লেখ করে জামিলুর রেজা চৌধুরী সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে বলেন, ‘গণিত নিয়ে বাংলাদেশের মতো পৃথিবীর অন্য কোনো দেশে এত কাজ হয় না। খুদে গণিতবিদেরা আমাদের জন্য যে সম্মান এনে দিয়েছে, এটা আমাদের অনেক দূর এগিয়ে নেবে।’
খুদে গণিতবিদদের শুভেচ্ছা জানিয়ে সায়েম আহমেদ বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের মেধা বিকাশে সহায়তা করতে পেরে আমরা গর্বিত। অংশগ্রহণকারীরা একটি কঠিন বিষয়কে সহজ করে জয় ছিনিয়ে এনেছে।’
এবার রৌপ্য পদক পেলেও দু-এক বছরের মধ্যে বাংলাদেশের খুদে গণিতবিদেরা আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াড থেকে স্বর্ণ ছিনিয়ে আনবে বলে আশাবাদ ছিল আব্দুল কাইয়ুমের কণ্ঠে।
খুদে গণিতবিদদের শুভেচ্ছা জানিয়ে আরও বক্তব্য দেন প্রবীণ গণিতবিদ খোদাদাদ খান, বিশিষ্ট জ্যোতির্বিদ এফ আর সরকার, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অধ্যাপক মোহাম্মদ কায়কোবাদ, সহযোগী অধ্যাপক হুমায়ূন কবির, নটর ডেম কলেজের অধ্যক্ষ বেঞ্জামিন ডি কস্তা, আবদুল মোনেম লিমিটেডের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক এ এস এম মাইনুদ্দিন মুনেম, লেখক ও চিকিৎসক মোহিত কামাল প্রমুখ। এ ছাড়া অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড কমিটির সহসভাপতি ও বিশিষ্ট লেখক মুহম্মদ জাফর ইকবালের ভিডিও বক্তব্য দেখানো হয়।
অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড কমিটির সাধারণ সম্পাদক মুনির হাসান। গণিতের গান ‘মন মেলে শোন শুনতে পাবি’ পরিবেশনের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘটে।

--

প্রথম আলো, ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০১২

http://prothom-alo.com/detail/date/2012-09-15/news/289464

প্রথম রুপা পেল বাংলাদেশ

IMO2012 bangladesh teamআন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডে (আইএমও) প্রথমবারের মতো রুপার পদক পেল বাংলাদেশ। দেশের তরুণ গণিতবিদেরা জিতেছে দুটি ব্রোঞ্জ পদকও। প্রতিযোগিতাটিতে এ পর্যন্ত সেরা সাফল্য দিয়েই এবারের অলিম্পিয়াড শেষ করল বাংলাদেশ।
আগের দিনই কার্যত নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিল ধনঞ্জয় বিশ্বাসের রুপা জেতার বিষয়টি। বাকি ছিল কেবল আনুষ্ঠানিকতা। সেটাই হয়েছে গতকাল রোববার। সৌরভ দাশ ও নূর মোহাম্মদ শফিউল্লাহ জিতেছেন ব্রোঞ্জ।
আর্জেন্টিনার মার ডেল প্লাটা শহরে অনুষ্ঠিত ৫৩তম আইএমওর চূড়ান্ত ফল ঘোষণা হয় স্থানীয় সময় রোববার দুপুরে। এর আগে বিচারকদের চূড়ান্ত সভায় ফল অনুমোদিত হয়।
শিক্ষার্থীদের মধ্যে যারা ১৪ থেকে ২০ নম্বর পেয়েছে তারা ব্রোঞ্জ, ২১ থেকে ২৭ নম্বর পাওয়া শিক্ষার্থীরা রুপা এবং ২৮ ও এর বেশি নম্বরপ্রাপ্তরা স্বর্ণপদক জিতেছে। ধনঞ্জয় বিশ্বাস ২৫, নূর মোহাম্মদ এবং সৌরভ দাশ ১৫ নম্বর পেয়েছে। বাংলাদেশ দলের অন্য দুই সদস্য পেয়েছে সম্মানজনক স্বীকৃতি।
বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের এই আয়োজনে অংশ নেওয়ার জন্য নির্বাচিত করে বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড কমিটি। ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের পৃষ্ঠপোষকতা এবং প্রথম আলোর ব্যবস্থাপনায় প্রতিবছর সারা দেশ থেকে গণিত উৎসবের মাধ্যমে এ জন্য শিক্ষার্থীদের বাছাই করা হয়।
প্রবীণ গণিতবিদ অধ্যাপক খোদাদাদ খান প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলেন, ‘গণিতের এই কঠিন প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশের এই সাফল্য অনেক বড় খুশির খবর। অভিনন্দন ধনঞ্জয়কে, অভিনন্দন বাংলাদেশ গণিত দলকে।’
আনন্দিত বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড কমিটির সহসভাপতি অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবালও। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানরত মুহম্মদ জাফর ইকবাল এক ই-মেইল বার্তায় শিক্ষার্থীদের অভিনন্দন জানিয়ে আগামীতে আরও ভালো করার আহ্বান জানান।
বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড কমিটির সদস্য ও বুয়েটের অধ্যাপক এম কায়কোবাদ বলেন, ‘এই অর্জন অনেক আনন্দের, অনেক গর্বের। আন্তর্জাতিক এই মেধার লড়াইয়ে আমাদের শিক্ষার্থীরা আবারও প্রমাণ করল তাদের যোগ্যতা। গণিত নিয়ে যে যাত্রা শুরু করেছিলাম আমরা, তার আরও একধাপ পূর্ণ হলো এই পদকের মাধ্যমে।’ রুপাজয়ী ধনঞ্জয় বিশ্বাস এবার চট্টগ্রাম কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে। ধনঞ্জয়ের মা স্বপ্না রানী দে আবেগাপ্লুত কণ্ঠে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার ছেলে দিন-রাত সব সময় অঙ্ক নিয়ে পড়ে থাকত। খেলাধুলা-আড্ডা কিছুই করত না। তার সব পরিশ্রম ও সাধনা সত্যি হলো এই অর্জনের মাধ্যমে। অনেক খুশি হয়েছি।’
সন্তানের এই সাফল্যে গর্বিত বাবা মিলন কান্তি বিশ্বাস বলেন, ‘এই খবরটার জন্য কয়েক দিন ধরে অপেক্ষা করছিলাম। সেই স্বপ্ন পূরণ হলো।’
ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কে এস তাবরেজ প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশের পক্ষে প্রথম রুপার পদক পাওয়ায় ধনঞ্জয়কে অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা জানান। তিনি বলেন, এই কৃতিত্ব বিশ্বের দরবারে বাংলাদেশকে গৌরবান্বিত করেছে। ডাচ্-বাংলা ব্যাংক অতীতের মতো ভবিষ্যতেও এই গণিত উৎসবের পৃষ্ঠপোষকতা করার আশা রাখে।
এবারের অলিম্পিয়াডে দলগত সাফল্যে দীর্ঘদিনের চ্যাম্পিয়ন চীনকে পেছনে ফেলে এই প্রথমবার দক্ষিণ কোরিয়া প্রথম স্থান দখল করেছে।
গতকাল রোববার বাংলাদেশ সময় মধ্যরাতে সমাপনী অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এবারের আইএমও শেষ হওয়ার কথা।

Published on: http://www.prothom-alo.com/detail/date/2012-07-16/news/273990

বাংলাদেশের প্রথম রুপা জয়

আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডে (আইএমও) বাংলাদেশের পক্ষে ২৫ নম্বর পেয়ে প্রথম রুপার পদক পেল ধনঞ্জয় বিশ্বাস। এ ছাড়া, বাংলাদেশ এবার দুটি ব্রোঞ্জ পদক পেয়েছে।
ধনঞ্জয় চট্টগ্রাম কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে। বাবা মিলন কান্তি বিশ্বাস একজন ব্যবসায়ী এবং মা স্বাস্থ্যসহকারী স্বপ্না রানী দে খুব খুশি ছেলের এই সাফল্যে। দুই ভাইয়ের মধ্যে ধনঞ্জয় বড়। দ্বিতীয়বারের মতো এবার আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডে অংশ নেয় ধনঞ্জয়। উল্লেখ্য, গত বছর নেদারল্যান্ডে অনুষ্ঠিত ৫২তম আইএমওতে ব্রোঞ্জ পদক অর্জন করে ধনঞ্জয়। বড় হয়ে গণিত ও পদার্থ নিয়ে পড়তে চায় ধনঞ্জয়।
বাংলাদেশের এবারকার যাত্রা অষ্টমবারের মতো। ১৯৫৯ সাল থেকে আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াড আয়োজন শুরু হয়। ২০০৪ সালে গ্রিসে অনুষ্ঠিত ৪৫তম আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডে বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড কমিটির সাধারণ সম্পাদক মুনির হাসান যোগ দেন। বাংলাদেশ সেখানেই আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডের পূর্ণ সদস্যপদ লাভ করে। ২০০৫ সালে মেক্সিকোয় অনুষ্ঠিত ৪৬তম আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডে প্রথম অংশ নেয়।
আইএমওতে বাংলাদেশের শিশুকাল কাটলেও এরই মধ্যে আমাদের অর্জন খুব একটা খারাপ নয়। ২০০৯ সালে জার্মানির ব্রিমেনে আইএমওর সুবর্ণজয়ন্তীর ৫০তম আয়োজনে সামিন রিয়াসাত ও নাজিয়া চৌধুরী প্রথমবারের মতো অর্জন করে দুটি ব্রোঞ্জ পদক, ২০১০ সালে কাজাখস্তানের আস্তানায় অনুষ্ঠিত ৫১তম আইএমওতে তারিক আদনান এবং ২০১১ সালে নেদারল্যান্ডের আমস্টারডামে ৫২তম আইএমওতে ধনঞ্জয় বিশ্বাস ব্রোঞ্জ পদক পায়। গত ছয় বছরে চারটি ব্রোঞ্জ পদক এবং ১৩টি ‘অনারেবল ম্যানশন’ অর্জন করেছে বাংলাদেশের খুদে গণিতবিদেরা।
ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের পৃষ্ঠপোষকতায় এবং প্রথম আলোর ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড কমিটি সারা দেশে গণিত উত্সবের মাধ্যমে আইএমওর জন্য বাংলাদেশ দলের সদস্যদের নির্বাচন করে থাকে।

Published on: http://www.prothom-alo.com/detail/date/2012-07-15/news/273901

এবার কাউকে খালি হাতে ফিরতে হবে না

পর্যটন নগরের নানা আকর্ষণ থাকে। তবে পৃথিবীর ১০০টি দেশ থেকে আসা বেশির ভাগই একটি ‘সামার’ অলিম্পিয়াডের কথা ভাবে। সে কারণে এদিক-সেদিক ঘুরে বেড়াতে দেখা যাচ্ছে কম লোককে। শিক্ষার্থীদের জন্য নানা রকম খেলাধুলার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। গতকাল শুক্রবার তাদের বেড়াতে নিয়ে যাওয়া হয় নগরের সবচেয়ে বড় অ্যাকুয়ারিয়াম দেখাতে। সেখানে দুপুর কাটিয়ে বিকেলে আবার তাদের বিচ ফুটবল, টেবিল টেনিস খেলায় ফেরার কথা। এর মধ্যে আমাদের সৌরভ আর আবিদের দল বিচ ফুটবলে চার গোলে হেরে দর্শক সারিতে জায়গা নিয়েছে।
নতুন বন্ধু বানানো, নতুন নতুন খেলার সঙ্গে পরিচিত হওয়া এবং পুরোনো বন্ধুদের সঙ্গে ভাববিনিময়ে শিক্ষার্থীরা যখন ব্যস্ত, তখন তাদের দলনেতা আর উপদলনেতারা হিমশিম খাচ্ছেন শিক্ষার্থীদের উত্তরপত্র মূল্যায়নে। আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডের (আইএমও) উত্তরপত্র মূল্যায়ন ঠিক আমাদের দেশের যেকোনো পরীক্ষার উত্তরপত্র মূল্যায়নের উল্টো। আমাদের দেশে উত্তরপত্র মূল্যায়নের একটি বড় অংশ জুড়ে থাকে শিক্ষার্থী কী জানে না, তা বের করার চেষ্টা। এখানে তার উল্টো।
যেহেতু ১০০ দেশের উত্তরপত্র ১০০টি দেশের মূল্যায়নকারীরা মূল্যায়ন করে থাকেন, তাই প্রথম থেকেই সুনির্দিষ্ট নিয়ম মেনে চলতে হয়। পরীক্ষার আগে যখন সমস্যা চূড়ান্ত করা হয়, তখন সেটি সমাধানের নম্বর দেওয়ার কাঠামোও (মার্কিং স্কিম) চূড়ান্ত করা হয়। শুধু তা-ই নয়, এক বা একাধিক অফিসিয়াল সমাধানও ঠিক করা হয়। তবে এই সমাধান দেওয়া হয় কেবল ধারণার জন্য। প্রকৃত প্রস্তাবে, বেশির ভাগ ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীরা অফিসিয়াল সমাধানে কাজ করে না। এতে বোঝা যায়, পরিণত মস্তিষ্কের সঙ্গে তরুণদের চিন্তাভাবনার অনেক তফাৎ থাকে। মার্কিং স্কিমে মূলত কী কী করলে পরে কত নম্বর পাওয়া যাবে, সেটি ঠিক করা থাকে। কিন্তু কীভাবে তা করা হলো, তার কোনো নির্দেশনা থাকে না। প্রত্যেক পরীক্ষার্থী তার ইচ্ছামতো সমস্যার সমাধান করতে পারে। যদি সে সম্পূর্ণ সমাধান করতে পারে, যেভাবেই হোক, তাহলে তার প্রাপ্য ৭-এ ৭! তবে কথা থাকে, সমাধানে পৌঁছানোর জন্য সে নির্দিষ্ট কিছু বিষয় প্রমাণ করেছে। কোনো কোনো সমস্যার অনেকগুলো অংশ থাকে। সম্পূর্ণ নম্বর পেতে হলে তার সবটুকুই করতে হয়। যেমন এবার ৪ নম্বর সমস্যার চারটি অংশ রয়েছে। সবগুলোই করতে হবে।
সমস্যার সমাধানের জন্য ধাপে ধাপে এগিয়ে যাওয়ারও কোনো বিষয় নেই। খাতার নানা অংশে তা থাকলেই চলে। তবে সেসব ক্ষেত্রে দলনেতা আর সমন্বয়কারীদের ব্যাপক পরিশ্রম করতে হয়। আবার কোনো সমস্যার সমাধানে কোনো শিক্ষার্থী যদি এমন কিছু করতে পারে, যা হয়তো সেভাবে নেই, কিন্তু আসলে ওই পথে এগুলোর সমাধান পাওয়া যাবে, তাহলেও শিক্ষার্থীকে কিছু নম্বর দেওয়া হয়।
স্থানীয় সময় শুক্রবার সকালে এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত আমরা প্রথম দিনের তিনটি সমস্যার খাতা দেখা চূড়ান্ত করেছি। এর মধ্যে ৩ নম্বর সমস্যাটি আমাদের কোনো শিক্ষার্থী চেষ্টা করেনি। ১ নম্বর সমস্যার সমাধান সবাই পূর্ণভাবে করেছে। আইএমওতে অংশ নেওয়ার অষ্টমবারের মাথায় এবারই প্রথম আমাদের সব প্রতিযোগী অন্তত একটি সমস্যার পূর্ণাঙ্গ সমাধান করেছে। এর মানে, এবার আর কাউকে খালি হাতে ফিরতে হবে না। অন্তত একটা সম্মানজনক উদ্ধৃতি তারা পাবে।
২ নম্বর সমস্যা থেকে সৌরভ ও ধনঞ্জয়—উভয়ে ৪ নম্বর করে সংগ্রহ করেছে। ধনঞ্জয়ের আংশিক প্রচেষ্টা যে শেষ পর্যন্ত একটি সমাধানের দিকে যাচ্ছিল, তা খুঁজে পেতে সমন্বয়কারীদের যথেষ্ট খাটাখাটুনি করতে হয়েছে।
পাঠক যখন এই প্রতিবেদন পড়বেন, ততক্ষণে আমাদের আরও দুটি সমস্যার সমন্বয়ের কাজ শেষ হবে। তবে সব খাতা দেখা শেষ হতে শনিবার দুপুর (বাংলাদেশ সময় রাত) গড়িয়ে যাবে। আর পদকের হিসাব-নিকাশ হবে রোববার সকালে। সেদিন বিকেলেই সমাপনী অনুষ্ঠানের মাধ্যমে শেষ হবে এবারের আইএমও।
এ নিয়ে বাংলাদেশ অষ্টমবারের মতো আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডে অংশ নিচ্ছে। ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের পৃষ্ঠপোষকতায় এবং প্রথম আলোর ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড কমিটি সারা দেশে গণিত উৎসবের মাধ্যমে আইএমওর জন্য বাংলাদেশ দলের সদস্যদের নির্বাচন করে থাকে।

Published on:http://www.prothom-alo.com/detail/date/2012-07-14/news/273452

শুরু হয়েছে খেলার লড়াই

প্রভিনশিয়াল হোটেলের নিচতলায় দুটি বড় কক্ষকে খেলাধুলার ঘরে পরিণত করা হয়েছে। একদিকে রয়েছে দাবার মতো মাথা ঘামানোর খেলা, অন্যদিকে রয়েছে টেবিল টেনিস আর ফুটবলের আয়োজন। বিভিন্ন দেশের বিশেষ কিছু খেলার ব্যবস্থাও রয়েছে।
রক, পেপার আর সিজস্রের মতো একটি আর্জেন্টিয়ান খেলা খুব জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। এটি হলো হাতের অবস্থান ও প্রকাশ দেখে নিজের জবাব দেওয়া। পুরো ব্যাপারটা আমি এখনো বুঝে উঠতে পারিনি। তবে অনেকেই এ খেলায় অংশ নিচ্ছে। গতকাল বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হয়েছে তাস, দাবা, ফুটবল ও অন্যান্য খেলার প্রতিযোগিতা। বাংলাদেশ দলের সদস্যরাও বিভিন্ন ইভেন্টে অংশ নিচ্ছে। এর আগে গত বুধবার গণিত অলিম্পিয়াডের মূল পর্বের পরীক্ষা শেষ হয়েছে।
অজ্ঞাতবাস থেকে দলনেতারা এসে যোগ দিয়েছেন আমাদের সঙ্গে। তবে প্রভিনশিয়াল হোটেলে নয়, আমি আর মাহবুব এসে উঠেছি পার্শ্ববর্তী হারমিটেজ হোটেলে। এখানেই উত্তরপত্র মূল্যায়ন ও সমন্বয়ের কাজ শুরু হয়েছে গতকাল থেকে। বুধবার পরীক্ষা শেষে বাংলাদেশ দলের সদস্যরা তাদের দলনেতা মাহবুব মজুমদারের সঙ্গে দেখা করে। তারা তাদের সমস্যা সমাধানের বিভিন্ন দিক মাহবুবকে অবহিত করেছে।
এদিকে, গত দুই দিন মুখ লুকিয়ে থাকার পর গতকাল সকাল থেকে সূর্যের দেখা পাওয়া গেছে। শীতের প্রকোপও একটু কম মনে হচ্ছে। তবে সূর্য ওঠার ঠিক আগে আগে আটলান্টিকের ওপরে আকাশে দীপ্যমান হয়ে ছিল বৃহস্পতি ও শুক্র গ্রহ। দক্ষিণ গোলার্ধে আকাশ দেখার অভিজ্ঞতা ভিন্ন রকমের, তা এর আগে দক্ষিণ আফ্রিকায় টের পেয়েছি। তবে ভোরের আকাশে জ্বলজ্বলে তারাদের দেখার অভিজ্ঞতা এবারই প্রথম। পূর্বাকাশে খুব সহজে শুক্র আর বৃহস্পতিকে দেখা গেছে। চাঁদের উপস্থিতিও যথেষ্ট সমাদৃত হয়েছে।
সকাল থেকে দলনেতারা তাঁদের শিক্ষার্থীদের উত্তরপত্র দেখা শুরু করেছেন; বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের চমৎকারিত্ব নিয়ে আলোচনা এখনো শুরু হয়নি। তবে এশিয়ার দেশগুলোর এবার ভালো করার যে সম্ভাবনা দেখা দিয়েছিল, পরীক্ষার সময় তা নিয়ে একটু সংশয় রয়েছে বেশ কয়েকজন দলনেতার। তাঁদের বক্তব্য, দুটি জ্যামিতি সমস্যা থাকলেও ৫ নম্বরটি মোটেই সহজ ছিল না।
গতবার থেকে বিশেষ নজরে আসা সৌদি আরব দল এবারও আলোচনায় রয়েছে। যদিও এরই মধ্যে আমেরিকার আইএমও বিশেষজ্ঞ টিটু এনডারেস্কু ও ডরিন দেশে ফিরে গেছেন। তাঁদের জায়গা নিয়েছেন সদ্য গণিত স্নাতক পামার নিবেইন। নিবেইন সম্প্রতি গাণিতিক সমস্যাবিষয়ক বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় ওয়েবসাইট আর্ট অব প্রবলেম সলভিংয়ে পূর্ণকালীন ফ্যাসিলিটেটর হিসেবে যোগ দিয়েছেন। তাঁর হিসেবে সৌদি আরবের শিক্ষার্থীদের যথেষ্ট উন্নতি হয়েছে।
৫৩তম আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডে অংশ নিতে বাংলাদেশ দল বর্তমানে আর্জেন্টিনার মার ডেল প্লাটা শহরে অবস্থান করছে। ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের পৃষ্ঠপোষকতায় এবং প্রথম আলোর ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড কমিটি পাঁচজনের এই গণিত দল নির্বাচন করে।

Published on: http://www.prothom-alo.com/detail/date/2012-07-13/news/273196

পরীক্ষা শেষ, উত্তরপত্র মূল্যায়ন শুরু

পরীক্ষা নিয়ে খুদে গণিতবিদদের মধ্যে টানটান উত্তেজনা। উপদলনেতাদের চোখে-মুখেও একই ছাপ। মিলনায়তনে উপস্থিত প্রায় সবার মধ্যেই ছিল এমন উত্তেজনা। সঙ্গে বিজয়ের আকাঙ্ক্ষা। গতকাল বুধবার এমন পরিবেশের মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডে (আইএমও) খুদে গণিতবিদদের মেধার লড়াই। এর পরই শুরু হয়েছে উত্তরপত্র মূল্যায়ন। আর্জেন্টিনার মার ডেল প্লাটা শহরে অলিম্পিয়াডের ৫৩তম এই আসরে অংশ নিচ্ছে ১০০টি দেশের পাঁচ শতাধিক খুদে গণিতবিদ। বাংলাদেশ থেকে অংশ নিচ্ছে পাঁচ খুদে গণিতবিদ।
গত দুই দিনে প্রতিযোগীদের ছয়টি গাণিতিক সমস্যা সমাধান করতে দেওয়া হয়। এবারের সমস্যা বাছাইয়ের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক ছিল বীজগণিতের অসমতার ফিরে আসা। কয়েক বছর ধরে আইএমওতে অসমতার দেখা পাওয়া যায়নি।
পরীক্ষা শেষে রাতের মধ্যে শিক্ষার্থীদের উত্তরপত্রের অনুলিপি রেখে মূল কপি নিজ নিজ দেশের দলনেতাদের কাছে সরবরাহ করা হয়। আইএমওর নিয়মানুযায়ী, প্রতিটি উত্তরপত্র দলনেতা ও উপদলনেতা এবং স্বাগতিক দেশের একটি দল মূল্যায়ন করবে। পরে সমন্বয়ের মাধ্যমে প্রাপ্ত নম্বর চূড়ান্ত করা হবে।
আমার দেখা অলিম্পিয়াডগুলোর মধ্যে এবারই প্রথম প্রতিযোগীদের থাকার আর পরীক্ষার জায়গা একই স্থানে করা হয়েছে। মার ডেল প্লাটা শহরের হোটেল প্রভিন্সিয়ালের দ্বিতীয় তলায় একটি বড় এবং একটি ছোট মিলনায়তনে ৫৫৫ জন পরীক্ষার্থী অংশ নেয়।
এই নিয়ে বাংলাদেশ অষ্টমবারের মতো আইএমওতে অংশ নিচ্ছে। ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের পৃষ্ঠপোষকতায় এবং প্রথম আলোর ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড কমিটি সারা দেশে গণিত উৎসবের মাধ্যমে আইএমওর জন্য বাংলাদেশ দলের সদস্যদের নির্বাচন করে থাকে।
আর আর্জেন্টিনা দ্বিতীয়বারের মতো আইএমওর আয়োজক দেশ। এর আগে ১৯৯৭ সালে ৩৮তম আইএমও হয়েছে এই মার ডেল প্লাটা শহরে। আর্জেন্টিনার সপ্তম এ বৃহত্তম শহরটি রাজধানী বুয়েনস এইরেস থেকে প্রায় ৪০০ কিলোমিটার দূরে, আটলান্টিকের পারে একটি পর্যটন নগর। নগরের সাড়ে ছয় লাখ অধিবাসীর সবাই কোনো না কোনোভাবে পর্যটন, মাছের বা বন্দরের ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। এটি একাধারে পোতাশ্রয়ও। আর্জেন্টিনার সবচেয়ে দীর্ঘ এ সমুদ্রতটজুড়ে হাজার খানেক হোটেল, অ্যাপার্টমেন্ট কমপ্লেক্স রয়েছে। আমাদের গাইড মাউরো জানালেন, পর্যটন মৌসুমে তার পরও সমুদ্রের পাড়ে দাঁড়ানোরও জায়গা থাকে না!
তবে, মার ডেল প্লাটাকে দেখে মূল আর্জেন্টিনা সম্পর্কে সঠিক ধারণা পাওয়া মুশকিল। কারণ, আর্জেন্টিনা মূলত গ্রামপ্রধান দেশ, শহরপ্রধান নয়। সোয়া চার কোটি লোক থাকে ১০ লাখ বর্গমাইল এলাকাজুড়ে! নামের সঙ্গে রুপা থাকলেও (ল্যাটিন আর্জেন্টান মানে রুপা) এখানে রুপার কোনো পাহাড় নেই। ধারণা করা হয় রুপার পাহাড়ের লোভে স্প্যানিশরা এখানে ঘাঁটি গেড়েছিল।
শীতপ্রধান দেশ বলে আমরা এখনো ঝাল কোনো খাবারের কবলে পড়িনি। তিন বেলা খাবারে মিষ্টির আধিক্য বেশি।
মঙ্গলবার প্রথম দিনের পরীক্ষা চলাকালে উপনেতাদের মহাসমুদ্রে বেড়াতে নিয়ে যাওয়া হয়। ছোট ইঞ্জিন নৌকা, তবে আমাদের দেশের মতো নয়। অনেক যন্ত্রপাতি আছে দেখলাম! ঘণ্টা খানেক চলার পর বোঝা গেল, প্রকৃতি বিরূপ। সকাল থেকে ঝিরিঝিরি বৃষ্টি ছিল, কিন্তু সমুদ্রে সেটা ঝড়ের রূপ নিল। ফলে আমরা বেশি দূর যেতে পারলাম না। ঢেউয়ের সঙ্গে নৌকার দুলুনিটা যথেষ্ট ভয়ের ছিল। তবে জাহাজের ক্যাপ্টেন আমাদের বেড়ানোর ক্ষতি পুষিয়ে দেওয়ার জন্য নৌকা নিয়ে গেলেন সিলের খাঁড়িতে। মোটা, ভুটকু, শুকনা আর লম্বা একদল সিল দেখা গেল সমুদ্র পাড়ে ঘুরে বেড়াতে। বেশি কাছে না গেলেও সিলের বোঁটকা গন্ধ টের পেয়েছি সম্যকভাবে।
পরদিন সকালে সমুদ্রের কথা বলার সময় ধনঞ্জয় জানতে চাইল, সাঁতার জানি কি না।
শূন্যের নিচে তাপমাত্রায় আটলান্টিক মহাসাগরে সাঁতার জানলেই বা কী!

Published on:http://www.prothom-alo.com/detail/date/2012-07-12/news/272989

শুরু হলো ৫৩তম মেধার লড়াই

১০০টি দেশের পাঁচ শতাধিক গণিতবিদের অংশগ্রহণে শুরু হলো বিশ্বের প্রাক-বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়াদের সবচেয়ে আকর্ষণীয় মেধার লড়াই্ল—আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াড (আইএমও)। এটি অলিম্পিয়াডের ৫৩তম আসর। গতকাল সোমবার আর্জেন্টিনার মার ডেল প্লাটা শহরে কুচকাওয়াজের মধ্য দিয়ে শুরু হয় অলিম্পিয়াডের আনুষ্ঠানিকতা।
শহরের রেডিও সেন্টার মিলনায়তনে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তারা গাণিতিক সমস্যা সমাধানে খুদে গণিতবিদদের সাফল্যকে উৎসাহিত করার আশাবাদ ব্যক্ত করেন। অনুষ্ঠানে খুদে গণিতবিদদের স্বাগত জানান আর্জেন্টিনার শিক্ষামন্ত্রী অধ্যাপক আলবার্তো সিলোনি, সংস্কৃতি, প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনী মন্ত্রী জোশে লিনো বারানো ও বুয়েনস এইরেস বিশ্ববিদ্যালয়ের রেক্টর রুবেন হালু। উপস্থিত ছিলেন মার ডেল প্লাটা শহরের মেয়র। অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন আইএমও উপদেষ্টা পরিষদের চেয়ারম্যান নজর আগাখানভ।
আইএমওর নিয়মানুসারে গতকাল নিজ নিজ দলের দলনেতাদের সঙ্গে প্রতিযোগীদের ‘চোখের দেখা’ হয়েছে। মিলনায়তনে বাংলাদেশ দলের দলনেতা মাহবুব মজুমদার হাত নেড়ে তাঁর দলের গণিতবিদদের শুভেচ্ছা জানান। আইএমওর প্রথা অনুসারে মাহবুব মজুমদার ৪ জুলাই থেকে অন্য দলনেতাদের সঙ্গে অজ্ঞাতবাসে রয়েছেন। সেখানে তাঁরা আজ মঙ্গলবার ও কাল বুধবারের জন্য সমস্যা নির্বাচন করছেন। এবার বাংলাদেশ দলে রয়েছে পাঁচ খুদে গণিতবিদ: ধনঞ্জয় বিশ্বাস, মির্জা মো. তানজীম শরীফ, সৌরভ দাশ, নূর মোহাম্মদ শফিউল্লাহ ও আদিব হাসান।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে প্রতিযোগীরা হোটেলে ফিরে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতির জন্য সময় কাটিয়েছে। আজ সকাল নয়টা থেকে (বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা ছয়টা) প্রথম দিনের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। প্রতিযোগীদের সাড়ে চার ঘণ্টা সময়ে তিনটি গাণিতিক সমস্যার সমাধান করতে হবে।
এর আগে রোববার সকাল থেকে বিভিন্ন দেশের গণিতবিদেরা মার ডেল প্লাটা শহরে উপস্থিত হয়। বাংলাদেশ গণিত দলের সদস্যরা পৌঁছায় ভোর ছয়টায়। মার ডেল প্লাটাতে হোটেল প্রোভিন্সিয়ালে বাংলাদেশসহ অংশগ্রহণকারী সব দেশের প্রতিযোগীরা অবস্থান করছে। তবে ফ্লাইট জটিলতায় কয়েকটি দেশের প্রতিযোগীরা এখনো এসে পৌঁছায়নি। আজ পরীক্ষা শুরু হওয়া পর্যন্ত অন্য উপদলনেতাদের সঙ্গে বাংলাদেশের উপদলনেতাও হোটেলে অবস্থান করবেন। এরপর নগরের অন্য প্রান্তের একটি হোটেলে দলনেতাদের সঙ্গে যোগ দেবেন খাতা মূল্যায়নের কাজে।
হোটেলে গণিত দলকে অভ্যর্থনা জানান বাংলাদেশ দলের গাইড মাউরো সিলম্যান। মাউরো ২০০৭ সালের ভিয়েতনাম ও ২০০৮ সালের স্পেনের আইএমওতে আর্জেন্টিনা দলের পক্ষে অংশ নিয়েছেন। আইএমও ব্রোঞ্জ পদক বিজয়ী মাউরো আগামী কয়েক দিন বাংলাদেশ দলের দেখভাল করবেন।
সকালে গাইড মাউরো বলেন, ‘চাইলে আমি ওদের কিছু টিপসও দিতে পারব।’ মাউরো বর্তমানে গণিত ও কম্পিউটার বিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনা করছেন। এবার নিয়ে অষ্টমবারের মতো আইএমওতে অংশ নেওয়া বাংলাদেশ দলের সদস্যরা এই প্রথম একজন গণিতের শিক্ষার্থীকে গাইড হিসেবে পেয়েছে। দুই দিনের যাত্রাপথের ক্লান্তি সত্ত্বেও দলের সদস্যরা বেশ ফুরফুরে মেজাজে রয়েছে।
উত্তর গোলার্ধে এখন গরমের সময় হলেও দক্ষিণ গোলার্ধে এখন শীতকাল। মার ডেল প্লাটা সমুদ্রতীরবর্তী শহর বলে এর তাপমাত্রা একটু বেশি। কিন্তু রাতের দিকে তাপমাত্রা শূন্য ডিগ্রির নিচে চলে যেতে পারে বলে জানা গেছে। দিনের বেলা তাপমাত্রা সর্বোচ্চ ১২ ডিগ্রি পর্যন্ত হতে পারে। আয়োজকেরা সবাইকে একটি করে উলের জ্যাকেট ও একটি করে ছাতা দিয়েছে। কারণ, আর্জেন্টিনার শীতের সঙ্গে বৃষ্টির কোনো বৈরী মনোভাব নেই।
২০০৫ সাল থেকে বাংলাদেশের খুদে গণিতবিদেরা আইএমওতে অংশ নিচ্ছে। ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের পৃষ্ঠপোষকতায় এবং প্রথম আলোর ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড কমিটি সারা দেশ থেকে ১৭টি আঞ্চলিক অলিম্পিয়াডের ২২ হাজার শিক্ষার্থীর মধ্য থেকে পর্যায়ক্রমে পাঁচজন প্রতিযোগীকে লাল-সবুজের পতাকা বহনের জন্য নির্বাচন করেছে।

Published on: http://www.prothom-alo.com/detail/date/2012-07-10/news/272296